শিশুর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের যে সকল বিধান মনে রাখা প্রয়োজন

      শিশুর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের যে সকল বিধান মনে রাখা প্রয়োজন 


শিশুর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের যে সকল বিধান মনে রাখা প্রয়োজন
শিশুর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের যে সকল বিধান মনে রাখা প্রয়োজন



শিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসপিতা-মাতার কর্তব্য। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়।


 এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা অতি অপ্রতুল। তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়।

 শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন। “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” [সহীহ মুসলিম]


এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ 


(বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।
আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম:
আব্দুল আযীয (পরাক্রমশালীর বান্দা),
আব্দুল মালিক,
আব্দুল কারীম (সম্মানিতের বান্দা),
 আব্দুর রহীম (করুণাময়ের বান্দা),
আব্দুল আহাদ (এক সত্তার বান্দা),
আব্দুস সামাদ (পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),
আব্দুল ওয়াহেদ (একক সত্তার বান্দা),
 আব্দুল কাইয়্যুম (অবিনশ্বরের বান্দা),
আব্দুস সামী (সর্বশ্রোতার বান্দা),
আব্দুল হাইয়্য (চিরঞ্জীবের বান্দা),
আব্দুল খালেক (সৃষ্টিকর্তার বান্দা),
আব্দুল বারী (স্রষ্টার বান্দা),
আব্দুল মাজীদ (মহিমান্বিত সত্তার বান্দা) ইত্যাদি।



পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম। যেমন:
আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক),
আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),
আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক),
 আব্দুল কালাম (কথার উপাসক),
আব্দুন নবী (নবীর উপাসক),
 আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),
আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) ইত্যাদি।


তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।


তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে। যেমন:


মুহাম্মদ
আহমাদ
ইব্রাহীম
 মুসা
 ঈসা
 নূহ
হুদ , লূত
 শিছ
হারুন
 শুআইব
আদম , ইত্যাদি।


নেককার ব্যক্তিদের নামে নাম রাখাও উত্তম। এর মাধ্যমে নবজাতকের মাঝে সংশ্লিষ্ট নামের অধিকারী ব্যক্তির স্বভাব চরিত্রের প্রভাব পড়ার ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া যায়। এ ধরনের আশাবাদ ইসলামে বৈধ। আরবীতে এটাকে তাফাউল বলা হয়। নেককার ব্যক্তিদের শীর্ষস্থানে রয়েছেন রাসূল (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম। তারপর তাবেয়ীন। তারপর তাবে তাবেয়ীন। এরপর আলেম সমাজ। বিশিষ্ট সাহাবী যুবাইর ইবনে আওয়াম তার ৯ জন ছেলের নাম রেখেছিলেন বদনের যুদ্ধে শহীদ হওয়া ৯ জন সাহাবীর নামে। তারা হলেন-


আব্দুল্লাহ
মুনযির
উরওয়া
হামযা
জাফর
মুসআব
উবাইদা
খালেদ
উমর। [তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১৭]



ব্যক্তির নাম তাঁর স্বভাব চরিত্রের উপর ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শাইখ বাকর আবু যায়েদ বলেন: “কাকতালীয়ভাবে দেখা যায় ব্যক্তির নামের সাথে তার স্বভাব ও বৈশিষ্ট্যের মিল থাকে। এটাই আল্লাহর তাআলার হেকমতের দাবী। যে ব্যক্তির নামের অর্থে চপলতা রয়েছে তার চরিত্রেও চপলতা পাওয়া যায়।

 যার নামের মধ্যে গাম্ভীর্যতা আছে তার চরিত্রের মধ্যে গাম্ভীর্যতা পাওয়া যায়। খারাপ নামের লোকের চরিত্রও খারাপ হয়ে থাকে, আর ভাল নামের লোকের চরিত্রও ভাল হয়ে থাকে।” [তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/১০, তুহফাতুল মাওদুদ-ইবনুল কাইয়্যেম ১/১২১]



অতএব শিশুর পিতার অনুমোদন সাপেক্ষে আত্মীয় স্বজন বা অপর কোন ব্যক্তি শিশুর নাম রাখতে পারেন। তবে যে নামটি শিশুর জন্য পছন্দ করা হয় সে নামে শিশুকে ডাকা উচিত। আর বিরোধ দেখা দিলে পিতাই পাবেন অগ্রাধিকার।
ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম: 
আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,


আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),
আব্দুল কালাম (কথার দাস),
আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),
আব্দুন নবী (নবীর দাস),
গোলাম রসূল (রসূলের দাস),
 গোলাম নবী (নবীর দাস),
আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),
 আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),
আব্দুল আলী (আলীর দাস),
 আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),
আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),
গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),
গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।


অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্ব

Tags

Post a Comment

0 Comments