আকিকার সঠিক নিয়ম
ইসলামের পরিভাষায় জেনে নিন আকিকার সঠিক নিয়ম,আকিকার সময়,সপ্তম দিন কোনটি,সপ্তমদিনে আকীকা করার হেকমত ও আকিকার জন্তু।
ইসলামের পরিভাষায় জেনে নিন আকিকার সঠিক নিয়ম?
ইসলামের পরিভাষায় সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পর আল্লাহর শুকরিয়াস্বরূপ যে জন্তু যবাই করা হয় তাকে আকীকা বলা হয়। সামর্থবান পিতার উপর সন্তানের আকিকা করা মুস্তাহাব রাসূলে কারীম (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘সন্তানের জন্য আকিকা করতে হয়। সুতরাং তোমরা তার পক্ষ থেকে যবাই কর এবং তার জঞ্জাল দূর কর। (অর্থাৎ মাথার চুল কামিয়ে দাও।)’
[সহীহ বুখারী: ২/৮২২]
রাসূলুল্লাহ (সা) আরো ইরশাদ করেছেন, ‘যার সন্তান ভূমিষ্ট হয়, সে যদি শিশুটির পক্ষ থেকে আকীকা করা পছন্দ করে, তাহলে যেন তাই করে।
[সুনান নাসায়ী: ২/১৬৭]
রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘ছাগ হৌক বা ছাগী হৌক, ছেলের
পক্ষ থেকে দু’টি ও মেয়ের পক্ষ থেকে একটি আক্বীক্বা দিতে হয়’।
(নাসাঈ তিরমিযী, আবূ দাউদ, ইবনু মাজাহ মিশকাত হা/৪১৫২,৪১৫৬; ইরওয়া হা/১১৬৬)।
পুত্র সন্তানের জন্য দু’টি দেওয়া উত্তম। তবে একটা দিলেও চলবে।
হযরত সামুরা বিন জুনদুব রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলে কারীম (সা) বলেছেন, ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক স্বরূপ থাকে। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে যবাই করবে এবং তার মাথা মু-ন করে নাম রাখবে।’
[সুনান আবু দাউদ: ২/৩৯২]
হাদীসটির ব্যাখ্যায় ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেছেন, এটি আখেরাতে শাফায়াতের ব্যাপারে। যে সন্তানের আকিকা করা হয়নি সে যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক অবস্থায় মারা যায় তাহলে মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে না।
আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রহ. যাদুল মা‘আদে লিখেছেন- আকীকা শয়তানের কবল থেকে সন্তানের হেফাযত ও সুরক্ষার জন্য উপায় ও উসিলা হয়। আকীকা না করা হলে সন্তান শয়তানের প্রভাব মুক্ত হতে পারে না। এখানে ভুল মা-বাবার, কিন্তু মাশূল দিতে হয় সন্তানকে। এর আরো দৃষ্টান্ত আছে। মা-বাবা যদি সঙ্গমের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়ে নেয়, এবং এ সঙ্গম দ্বারা গর্ভ সঞ্চার হয়, তাহলে সে সন্তান শয়তান থেকে নিরাপদ হয়ে যায়। আর যদি বিসমিল্লাহ না পড়ে তাহলে সন্তানের এ নিরাপত্তা অর্জিত হয় না।
আকিকার সময়?
জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম। সপ্তম দিনে সম্ভব না হলে চৌদ্দতম দিনে করবে। তাও সম্ভব না হলে একুশতম দিনে করবে। হাদীস শরীফে এই তিন দিনের উল্লেখ আছে। কেউ যদি এ দিনগুলোতেও আকিকা করতে সক্ষম না হয় তাহলে পরবর্তী যে কোন সময়ে তা করে নিতে পারবে।
হযরত আমর ইবনে শুয়াইব রা. এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে রাসূলে কারীম (সা) নির্দেশ দিয়েছেন, ‘সপ্তম দিনে নবজাতকের আকিকা করবে, নাম রাখবে, মাথার জঞ্জাল (চুল) দূর করবে।’
[মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা: ১২/৩২৬]
হযরত বুরাইদা রা. এর সূত্রে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল (সা) ইরশাদ করেছেন, ‘আকীকার পশু সপ্তম বা চৌদ্দতম বা একুশতম দিনে যবাই করা হবে।’
[আলমুজামুল আওসাত ৫/৪৫৭]
সপ্তম দিন কোনটি?
যে বারে শিশু জন্ম লাভ করে এর আগের দিনটিই সপ্তম দিন। সন্তান যদি সোমবারে ভূমিষ্ট হয় তাহলে তার আকিকা হবে পরের রবিবারে। আর যদি রবিবারে ভূমিষ্ট হয় তাহলে তার আকিকা হবে শনিবারে। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে- আরবী হিসাবে রাত আগে আসে। শুক্রবার দিবাগত রাতটি শনিবারের। আবার রাতের হিসাব শুরু হয় সূর্যাস্তের পর থেকে। সুতরাং কোনো বাচ্চা শুক্রবার সুর্যাস্তের পর ভূমিষ্ট হলে তার জন্মদিন শনিবার, আকিকা হবে শুক্রবার। শনিবার সূর্য ডোবার পর ভূমিষ্ট হলে তার জন্মদিন রবিবার, আকিকা হবে শনিবার।
সপ্তমদিনে আকীকা করার হেকমত?
সপ্তাহের দিন মোট ৭ টি। একটি মানব শিশুর জীবন দীর্ঘ হতে থাকে আর এ দিনগুলোই ঘুরে-ফিরে বারবার আসতে থাকে। সপ্তম দিনে আকিকা করার মাধ্যমে সন্তানের আয়ুর ব্যাপারে একটি ‘শুভলক্ষণ’ গ্রহণ করা হয়। এ নবজাতক এভাবেই সপ্তাহের পর সপ্তাহ পার করতে থাকবে। আর তার হায়াত দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হতে থাকবে। ইসলামে শুভলক্ষণ গ্রহণ করা জায়েয। অশুভলক্ষণ গ্রহণ করা জায়েয নেই।
আকিকার জন্তু?
আকিকার জন্তু কুরবানীর জন্তুর মতোই নির্দিষ্ট বয়সের হতে হবে। কুরবানীর জন্তু যেসব ত্রুটিমুক্ত হতে হয় আকীকার জন্তুও সেসব ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। যে জন্তু দিয়ে কুরবানী করা জায়েয নেই তা দিয়ে আকিকা করাও জায়েয নেই।
উত্তম হলো ছেলের আকিকায় দু’টি ছাগল যবাই করা এবং মেয়ের আকীকায় একটি। হযরত উম্মে কুরয কা‘বিয়া রা. বলেন, আমি রাসূলে কারীম (সা)কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য সমপর্যায়ের দুটি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করবে।’
[সুনান আবু দাউদ: ২/৩৯২]
‘সমপর্যায়ের ব্যাখ্যায় ইমাম আহমদ রহ. বলেন, দেখতে উভয়টি একই ধরণের হবে। অথবা সে দু’টি একই বয়সের হবে।
হযরত উম্মে কুরয রা. আরো বলেন, আমি রাসূলে কারীম (সা)কে বলতে শুনেছি, ‘ছেলের জন্য দু’টি ছাগল এবং মেয়ের জন্য একটি ছাগল যবাই করবে। আর এতে তোমাদের কোন ক্ষতি নেই-সেগুলো নর হোক কিংবা মাদী।’
[সুনান আবু দাউদ: ২/৩৯২]
অসচ্ছলতার কারণে পুত্র সন্তানের ক্ষেত্রে যদি দু’টি ছাগল যবাই করা জটিল হয়, তাহলে একটি দিয়েও আকিকা আদায় হয়ে যাবে। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত হাসান রা. ও হযরত হুসাইন রা. এর পক্ষ থেকে একটি করে দুম্বা দিয়ে আকিকা করেছেন।
[সুনান আবু দাউদ: ২/৩৯২]
এ হাদীস থেকে আরো একটি বিষয় বুঝে আসে। সন্তানের জনক ছাড়া অন্য লোকের দ্বারাও আকিকা আদায় হয়ে যাবে। যেমন নানা, দাদা, মামা, চাচা। রাসূলে কারীম (সা) নানা হিসাবে নাতীদ্বয়ের আকিকা করেছেন।
আকীকার জন্তু নিজের বাড়ি, নানার বাড়ি বা অন্য যে কোন স্থানে যবাই করা যেতে পারে। এতে সমস্যার কিছু নেই। দু’টি জন্তু যবাই করার ক্ষেত্রে যদি দু’টি দুই বাড়িতে যবাই করা হয় এবং দুই সময়ে যবাই করা হয়- তাতেও অসুবিধা নেই।
গরু দ্বারা আকিকা?
আজকাল কেউ কেউ বলতে শুরু করেছেন- আকিকা করতে হবে ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দিয়ে। গরু, মহিষ বা উট দিয়ে নয়। তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। যেসব জন্তু দিয়ে কুরবানী করা যায়, সেসব জন্তু দ্বারা আকিকাও করা যায়। কোন হাদীসে আকিকার ক্ষেত্রে গরু, মহিষ, উট নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়নি। বরং এর বিপরিতটি প্রমাণিত।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম (সা) ইরশাদ করেন, ‘যার কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে, সে যেন উট, গরু অথবা ছাগল দ্বারা আকিকা করে।’
[আলমুজামুল আওসাত: ৩৭
সর্বপ্রথম জাহান্নামে যাবে কে? নিশ্চয়ই 'ফিরআউন'?