রোজার ফরয কয়টি ও কি কি?

 রোজার ফরয কয়টি ও কি কি?


রোজার ফরয কয়টি ও কি কি?,রমজানের ওয়াজিবসমূহ,রোজার সুন্নত কয়টি,রমজানের মুস্তাহাব, মুস্তাহসান ও নফল আমলসমূহ,রোজা ভঙ্গের কারণ।


রোজার ফরয কয়টি ও কি কি
 রোজার ফরয কয়টি ও কি কি

সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার,কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম সাওম বা রোজা। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি হচ্ছে রমজান মাসের রোজা। সূরা বাকার ১৮৫ নং আয়াতের দ্বারা দ্বিতীয় হিজরীতে রোজা উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। তাই রমজানের রোজাকে কেউ যদি অস্বীকার করে তাহলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।



রোজার ফরয কয়টি ও কি কি?

কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতিও।আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘তোমাদের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থ থাকে অথবা সফরে থাকে তবে তাদের নির্ধারিত সংখ্যা (রোজা) পরে পূর্ণ করে নেবে।


রোজার ৩ ফরজ : 

১. নিয়ত করা

২. সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা

৩. যৌন আচরণ থেকে বিরত থাকা।

আবার অন্যভাবে বলা যায় রোজার ফরজ ৬০ টি তা হলো,৩০ রোজার ৩০ নিয়ত করা ফরজ  এবং ৩০ টি রোজা রাখা ও ফরজ।এভাবে বললে ফরজ হয় ৬০ টি।




রোজার সুন্নত কয়টি?

রোযার অনেক সুন্নত রয়েছে, যেমন-

(১)  যদি কেউ রোযাদারকে গালি দেয় কিংবা তার সাথে ঝগড়া করতে আসে তাহলে রোযাদার তার দুর্ব্যবহারের জবাব ভাল ব্যবহার দিয়ে বলবে: ‘নিশ্চয় আমি রোযাদার’। যেহেতু সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “সিয়াম হচ্ছে ঢালস্বরূপ। অতএব, কেউ যেন মন্দ কথা না বলে, মূর্খ আচরণ না করে। যদি কোন লোক তার সাথে ঝগড়া করে কিংবা তাকে গালি দেয় তাহলে সে যেন বলে দেয়, আমি রোযাদার, আমি রোযাদার। ঐ সত্তার শপথ যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, নিশ্চয় রোযাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে উত্তম। (আল্লাহ্‌ বলেন) আমার কারণে সে পানাহার ও যৌনসুখ বর্জন করেছে। রোযা আমারই জন্য। আমিই রোযার প্রতিদান দিব। এক নেকীর প্রতিদানে দশ নেকী দিব।


 (২)  রোযাদারের জন্য সেহেরী খাওয়া সুন্নত। সহিহ বোখারী ও সহিহ মুসলিমে আনাস বিন মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সেহেরী খাও; কারণ সেহেরীতে বরকত রয়েছে।


(৩)  বিলম্বে সেহেরী খাওয়া সুন্নত। দলিল হচ্ছে, সহিহ বুখারীতে আনাস (রাঃ) যায়েদ বিন সাবেত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন তিনি বলেন: আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সেহেরী খেলাম। এরপর তিনি নামাযে দাঁড়ালেন। আমি বললাম: আযান ও সেহেরী মাঝে কতটুকু সময় ছিল? তিনি বলেন: পঞ্চাশ আয়াত তেলাওয়াত করার সমান সময়।


(৪)  অবিলম্বে ইফতার করা সুন্নত। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “মানুষ ততদিন পর্যন্ত কল্যাণে থাকবে, যতদিন তারা অবিলম্বে ইফতার করে।


(৫)  কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি কাঁচা খেজুর না পাওয়া যায় তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকে তাহলে পানি দিয়ে। দলিল হচ্ছে আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।


(৬)  হাদিসে যা বর্ণিত হয়েছে সেটা বলে ইফতার করা সুন্নত। হাদিসে এসেছে ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলে ইফতার করা। সঠিক মতানুযায়ী ‘বিসমিল্লাহ্‌’ বলা ওয়াজিব; যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। আরও বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু, ওয়া আলা রিযকিকা আফতারতু। আল্লাহুম্মা তাকাব্বাল মিন্নি ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম।” (অর্থ- হে আল্লাহ্‌, আপনার জন্যই রোযা রেখেছি এবং আপনার দেয়া রিযিক দিয়ে ইফতার করেছি। হে আল্লাহ্‌, আমার পক্ষ থেকে আপনি কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।)।[ইবনুল কাইয়্যেম তাঁর ‘যাদুল মাআদ’ গ্রন্থে (২/৫১) বলেছেন, হাদিসটি দুর্বল] আরও বর্ণিত হয়েছে, “যাহাবায যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু, ইনশাআল্লাহ্‌” (অর্থ- তৃষ্ণা দূরীভুত হল, শিরাগুলো সিক্ত হল এবং ইনশাআল্লাহ্‌, সওয়াব সাব্যস্ত হল)।[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৭), সুনানে বাইহাকী (৪/২৩৯), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে (৪/৩৯) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করা হয়েছে]




রমজানের ওয়াজিবসমূহ

উত্তর:- রমজানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ওয়াজিব ২ টি । যথা :- সদকাতুল ফিতর আদায় করা ও ঈদের নামাজ পড়া। ঈদের দিন সকালে যিনি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বা অধিকারী থাকবেন, তিনি তাঁর নিজের ও পরিবারের সব সদস্যের ফিতরা আদায় করবেন। যদি কেউ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না–ও থাকেন, তবু সুন্নত বা নফল হিসেবে হলেও সদকাতুল ফিতরা প্রদান করা উত্তম প্রত্যেক মুসলিমের।




রমজানের মুস্তাহাব

উত্তর:- পবিত্র রমজান মাসে প্রত্যেক রাত্রির বিশেষ মুস্তাহাব নামাজ।




মুস্তাহসান ও নফল আমলসমূহ

উত্তর:- রমজান মাসের বিশেষ নফল আমলসমূহ হলো পবিত্র কোরআন একাধিকবার খতম  করা; কালিমা তৈয়্যেব অধিক পাঠ করা; দরুদ শরিফ সর্বাধিক পরিমাণে পাঠ করা; তওবা ও ইস্তিগফার করতে থাকা; সর্বদা তাসবিহ তাহলিল ও জিকির আজকার করতে থাকা; দ্বীনি শিক্ষা ও দ্বীনি দাওয়াতি কাজে মশগুল থাকা; ধর্মীয় বই-পুস্তক, কোরআন তাফসির, হাদিস, ফিকহ ও ইসলামি সাহিত্য নিজে পড়া ও অন্যকে পড়তে সাহায্য করা; দ্বীনি মজলিশ আয়োজন করা; অধীনস্থ কর্মচারী ও শ্রমিকদের কাজের চাপ কমিয়ে দেওয়া এবং তাঁদের পূর্ণ মজুরি ও অতিরিক্ত সম্মানী প্রদান করা; বেশি বেশি দান–খয়রাত করা ইত্যাদি। 




রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ কি কি?

 উত্তর:- আল্লাহ তাআলা রোজা ভঙ্গের প্রধান কারণ গুলো উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হচ্ছে - পানাহার ও সহবাস। আর রোজা ভঙ্গের অন্য কারণ গুলো আল্লাহর নবী রাসূল সাঃ তাঁর হাদিসে উল্লেখ করেছেন।যেমন-

১. স্ত্রী সহবাস করা

২. পানাহার করা

৩. এমন কিছু যা পানাহারের স্থলাভিষিক্ত

৪. ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা

৫. মহিলাদের হায়েয ও নিফাসের কারণে রক্ত বের হওয়া

৬. হস্তমৈথুন করা

৭. শিঙ্গা লাগানো বা এমন জাতীয় কোন কাজ করার কারণে রক্ত বের করা

Tags

Post a Comment

0 Comments