খিচুড়ী কি আসলেই পুষ্টিকর খাবার?

 

খিচুড়ী কি আসলেই পুষ্টিকর খাবার?


খিচুড়ী কি আসলেই পুষ্টিকর খাবার
খিচুড়ী কি আসলেই পুষ্টিকর খাবার


খিচুড়ী_কি_আসলেই পুষ্টিকর_খাবার।পুষ্টিবিদদের ভাষায় প্রোটিন ও ক্যালরির এক দারুন মেলবন্ধন এর নাম খিচুড়ি। বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্ট এড করতে।বাচ্চাদের খাবারের অপ্রতুলতা থেকে বাচাতে এই চাল ডাল আলু যোগে খিচুড়ী দেয়া হতো।কেবল খেতে সুস্বাদু, তাই-ই নয়; পুষ্টিগুণেও অনন্য খিচুড়ি। জেনে নেওয়া যাক খিচুড়ির পুষ্টিগুণ। * খিচুড়িতে থাকে ভাতের শর্করা, ডালের প্রোটিন আর সবজির ভিটামিন। তাই সুষম পুষ্টিতে অনন্য এ খাবার।


খিচুড়ী মানে কি : চাল, ডাল, সবজি তেল যোগে যা বানানো হয় তাইতো?? । 

পুষ্টিবিদদের ভাষায় প্রোটিন ও ক্যালরির এক দারুন মেলবন্ধন এর নাম কিন্ত খিচুড়ি। প্রয়োজন মত যাতে আপনি বিভিন্ন নিউট্রিয়েন্ট এড করতে পারবেন।

এক সময় বন্যা দূর্গত এলাকায় দ্রুত বাচ্চাদের খাবারের অপ্রতুলতা থেকে বাচাতে এই চাল ডাল আলু যোগে খিচুড়ী দেয়া হতো। 

কিছু সংখ্যক অঞ্চলে বিভিন্ন খরা প্রাকৃতিক দূর্যোগ এর জন্য অভাব লেগেই থাকতো। পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে বিশেষ করে প্রোটিন ও ক্যালরির অভাবে শিশুরা অপুষ্টির শিকার হতো। না খাওয়ার ফলে শিশু এই অপুষ্টির শিকার হতো। যা নিচের ছবি তে দেখতে পাচ্ছেন। 

এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ।  বিশেষ সময়ে অভাবের এই তাড়না থাকলেও আগের মত অবস্থা নাই। এখন মাতৃ মৃত্যুর হার ও শিশু মৃত্যুর হার আগের চেয়ে কমেছে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও বেসরকারি সংস্থার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ।

এখন তাহলে কি অপুষ্টি নাই? আচ্ছা কাহিনী এখানেই!  

এখন অপুষ্টি  দুই রকমের

১. অনাপুষ্টি (কম)

২. অতিপুষ্টি (বেশী)  

মানে বেশি পুষ্টিও এখন এক রকমের অপুষ্টি!  বিষয় টা ইন্টারেস্টিং না?? এখন আমি এই অতিপুষ্টিই বেশি দেখি। অনাপুষ্টির বাচ্চা কম। 

এই অতিপুষ্টির দরুন শিশুরা এখন স্বাস্থ্যঝুকিতে পড়ছে। 

অনাপুষ্টি হলে না হয় আপনি ভালো ভালো  খাবার দিয়ে বাচ্চাকে সুস্থ করে তুলতে পারবেন। কিন্তু অতিপুষ্টি হলে ত শিশু নাদুসনুদুস কিউট বাচ্চা দেখতে সুন্দর । 

তখন কি বলে লোকে..... ""কম খাবার বাচ্চাকে দিবো??  এক্টাই সন্তান আমার। আমার যা সম্পদ সব ওর।  পাগল নাকি খাবার বেশি হচ্ছে বলে! এইটুক বাচ্চা, ধুর এটা বংশের মোটা।"" এভাবেই অনেক বাবা, অনেক মা, দাদী ও নানীরা আমাদের কে কথা শুনিয়ে দেন। 

যাই হোক মোটা শুকনা নিয়ে আমি চিন্তা করিনা সুস্থতাই আসল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ।

যা বলছিলাম এই অতিপুষ্টির আধুনিক যুগে খিচুড়ী কি করে পুষ্টিকর খাবার হয় সবার জন্য বলুন তো??? 

♠একটু রেসিপি বলি দেখেন, এখনকার খিচুড়ি কিভাবে রান্না হয়

*পোলাও চাল

* ডাল

* চার/পাচ রকমের সবজি ( সবাই এটা দেয় না)

* ঘি  ( বেশি পুষ্টির আশায় অনেক মা এটা দিয়ে থাকেন)

* ডিম

* মুরগী

* মশলা

* গরু

* বাদাম গুড়া/ কিসমিস 

(আর ও কিছু মিস করলাম কিনা এড করে দিয়েন কেউ 

যেখানে রেসিপি হওয়া উচিত ছিলো

* ১ ভাগ ভাতের চাল

* ১/৪ ভাগ ডাল

* ২ ভাগ সবজি ( ১,২ টা) / নরম শাক

* ডিম/ মুরগী 

* অল্প তেল / তেলছাড়া 

আমরা আসলে পুষ্টিকর খিচুড়ি করি না আমরা জগা খিচুড়ী বানাই। 

আরেকটা খিচুড়ি আছে ৬ মাস বয়সী বাচ্চার খিচুড়ি!  মাঝে মাঝে মায়েদের কাছ থেকে রেসিপি শুনে আমার ই গলা শুকিয়ে যায়!! যেখানে চাল ডাল আর একটা সবজি দিয়েই খিচুড়ি করলেই হয় সেখানে তারা ঘরে থাকা সব উপকরন ই খিচুড়ী তে দিয়ে দেন। জিজ্ঞেস করলে বলেন পুষ্টিকর খাবার তাই। 

কিসমিস থেকে শুরু করে খেজুর, বাদাম এক দিনে সব ই দেয়ার জন্য মায়েরা চিন্তিত থাকেন। মায়েদের আবেগের জায়গা টা বুঝতে পারি। কিন্ত খাবারের ক্ষেত্রে আবেগ কখনো ভালো কিছু বয়ে আনে না। 

বাচ্চার খিচুড়ি পুষ্টিকর বানাতে হলে কি করবেন আসুন জেনে নেই..... 

১. পোলাও এর চালের খিচুড়ি স্পতাহে ১ দিন করেন বাকি দিন ভাতের চাল দিয়ে। নাহলে শিশুর টয়লেট কষা পেট ফাপা সহ আরো সমস্যা হয়। 

২. একটা সবজি রাখুন বা ২ টা এর বেশি না।এক্ষেত্রে রঙ প্রাধান্য পাবে যেমন: হলুদ মিষ্টিকুমড়া, কমলা রঙের গাজর, সবুজ শাক 

৩. শাক দিলে শাক ;  সবজি আর দেয়ার দরকার নাই। তবে শাক দেয়া খিচুড়ি রাতের বেলা দিবেন না। 

৪. ডালের পরিমান খুব কম। মসুর মুগ ৪/৫ রকমের ডাল কোন প্রয়োজন নাই। একটা ডাল নিন।

৫. আজকে ডিম কাল মুরগী পরের দিন মাছ। একেক দিন একেক টা প্রোটিন  দিন। একি সাথে সব না।

৬. বাচ্চাদের জন্য সব সময় এক রকম করে ঘুটে বানাবেন না একদিন চাল ডাল দিয়ে সাদা করে বানাবেন সাথে ডিম ভেজে নিবেন আলাদা।অথবা মুরগী নিবেন ১ পিস আপনার রান্না খাবার থেকে তুলে।এতে শিশু আলাদা করে খাবারের স্বাদ বুঝবে। 

৭.আল্লাহর ওয়াস্তে খাবার ঘুটে ব্লেন্ড করে দিবেন না। ভালো করে কুক করে হাতে চটকে খাওয়ান।ব্লেন্ডিং খাবার বাচ্চার হজমে সমস্যা করে। বাচ্চাকে খাবারে স্বাদ বুঝতে দিন।

৮. তেল পরিমান মত। ঘি দেয়ার দরকার নাই। বাচ্চা যদি রোগা পটকা ওজন অনেক কম হয় তাহলে মাঝেমধ্যে দিবেন। 

৯. মশলা বলতে আদা একটু কুচে আর একটু রসুন কুচে ফোড়ন দিন। বাটা চেয়ে কাটা মশলা বেশি ভালো।  

ব্যস হয়ে গেলো পুষ্টিকর খিচুড়ী। এখন এই পুষ্টিকর খিচুড়ী অতিরিক্ত ওজন আছে এমন বাচ্চাদের জন্য উপযোগী হবে না। সেক্ষেত্রে ক্যালরী বেড়ে যাবে।

আপনি যেভাবেই যা দিয়ে বানান না কেনো সেটা খিচুড়ী হয়ে যাবে সন্দেহ নাই তবে উপরের বিষয় গুলো খেয়াল রাখবেন। বড়রা তার পছন্দমত রেসিপি করে খাবেন।আমার বাসায় একটা খিচুড়ি চলে নাম  স্যুপ খিচুড়ী বড়রা খায়।  স্যুপের মত পাতলা অনেক পানি। চাল ডাল সাথে ডিম অথবা আলুর ভর্তা। 

এই খিচুড়ী নিয়ে এত কিছু বললাম কারন আমাদের মধ্যে একটা বদ্ধমূল ধারনা আছে পুষ্টিকর খাবার মানে একসাথে সব ঘুটে দাও গুড়া করে দাও প্রতিদিন দাও বেশি বেশি দাও।না, সবার জন্য সব পুষ্টিকর খাবার গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। এটা নির্ধারিত হবে তার ওজন উচ্চতা বয়স, শারীরিক কর্মদক্ষতা ও শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে!  এবং কিভাবে রান্না করছেন সেই পদ্ধতিও কিন্তু গুরুত্বপূর্ন। 

যাই হোক খিচুড়ি প্রেমীরা মন খারাপ করবেন না। মাঝেমধ্যে নিয়মের ব্যতিক্রম করা খারাপ না। তবে যাহাই করিবেন,  ভাবিয়া করিও কাজ ; করিয়া ভাবিও না! 

Tags

Post a Comment

0 Comments